মাইক্রোপট পদ্ধতিতে হাইব্রিড সূর্যমুখীর চাষ

Share with Friends

সম্পদ রঞ্জন পাত্র: রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় সূর্যমুখীর ভাল সম্ভাবনা থাকলেও কতগুলি সমস্যার কারণে এর চাষ আশানুরূপ গতি পাচ্ছে না। সূর্যমুখী সাধারণত একটু নিচু এবং ভারী গঠনের মাটিতে (এঁটেল) ভাল হয়। এবং এটি অল্পবিস্তর লবনাক্ততাও সহ্য করতে পারে।

এই রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এর সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু খারিফ ধানের পর এই সব জমিতে বীজ বপন করতে প্রায় ডিসেম্বরের শেষ, এমনকি জানুয়ারিও হয়ে যায়। যদিও সূর্যমুখী তাপ ও আলোক দৈর্ঘ্য সংবেদনশীল না হওয়ায় (Thermo and photoperiod insensitive) তা সারা বছর চাষ করা যায়। কিন্তু ফুল অবস্থায় অত্যধিক তাপমাত্র অথবা বর্ষা হলে প্রচুর দানা ভুয়ো হয়ে যায়। দানা পুষ্ট হওয়ার সময় অত্যধিক তাপমাত্রা থাকলে দানা ঠিক মতো পুষ্ট হয় না এবং দানায় তেলের ভাগ ও মান নেমে যায়। সূর্যমুখীর পাতা বড় বড় হওয়ায় ঝড়ে এই গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অন্যদিকে, সূর্যমুখী মাঝ নভেম্বরের পরে লাগালে ফসল উচ্চতাপমাত্রা, কালবৈশাখীর ঝড় ইত্যাদি প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে। ফলে শুধু যে ফলন কম হয় বা ফসলের নাম খারাপ হ তা নয়, অনেক ক্ষেত্রে ফসল সম্পূর্ণ নষ্টও হয়ে যায় অথচ মাঝ নভেম্বরের আগে সূর্যমুখী লাগালে ফসল ফুলের সময় দানাপুষ্ট হওয়ার সময় খুব অনুকূল তাপমাত্র পায়। এবং ওই সময় সাধারণত ঝড়বৃষ্টি হয় না। ফলে দানা ভুয়ো হয়ে যায় না বরং দানা খুব পুষ্ট ও ভারী হয়। এবং তাতে তেলের ভাগ ও মান ভাল পাওয়া যায়। তা ছাড়াওই সময় সূর্যমুখী লাগালে তা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে কিংবা মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে উঠে আসে ফলে সহজেই পরবর্তী ফরস হিসাবে মুক, কলাই, ভুট্টা, সবজি ইত্যাদি ফসলের চাষ করা যায়। যেহেতু সূর্যমুখী মাটি থেকে প্রচুর উদ্ভিদ খাদ্য আহরণ করে নেয় তাই এর পর ডাল জাতীয় ফসলের চাষ মাটির স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশি উপযোগী।

কৃষি সংক্রান্ত খবরাখবরের জন্য আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিতে এখানে ক্লিক করুন

কিন্তু সূর্যমুখী যে সমস্ত জমিতে ভাল হয় অর্থাৎ মাঝারি থেকে নিচু অবস্থানের ভারী মাটি যুক্ত জমিতে খারিফে সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদী ধআন ছাষ করা হয়। যা উঠতে উঠতে প্রায় নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হয়ে যায়।

অন্যদিকে ওই সমস্ত মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় তা জো অবস্থায় আসতেও বেশি সময় লাগে। তা ছাড়া ধান কাটার সময় বর্ষা হলে জমির জো আসতে আরও দেরি হয়ে যায়। এই সব নানা কারণে সূর্যমুখী মাঝ ডিসেম্বরের আগে কৃষক ভাইরা বপন করতে পারেন না।

কৃষি সংক্রান্ত খবরাখবরের জন্য আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিতে এখানে ক্লিক করুন

রাজ্যের এই পরিস্থিতিতে সূর্যমুখী সঠিক সময়ে বপন করতে মাইক্রোপট পদ্ধতি অত্যন্ত ফলপ্রসু। আমন ধান কাটার ১০-১২ দিন আগে মাইক্রোপটে সূর্যমুখীর বীজ বপন করা হয়। এবং ওই সময় ধানের জমিতে জল থাকলে চারিদিকে নালা কেটে তা ছিঁচে বের করে দেওয়া আবশ্যক। যাতে ধান কাটার সমসয় জমিতে জল না থাকে এবং চারা লাগানোর জন্য গর্ত করলে তাতে জল না চলে আসে।

সঠিক পদ্ধতিতে মাইক্রোপটে চারা তৈরি করুন। ধান কেটে তা জমিতে এমন ভাবে শুকাতে দিন যাতে ৬০ সেন্টিমিটার অন্তর ফাঁকা সারি থাকে ওই সারিতে ৩০ সেন্টিমিটার (সম্ভব হলে হস্তচালিত মাটিতে গর্ত করার যন্ত্রের সাহায্যে) গর্ত করে সঠিক পদ্ধতিতে (পূর্ব বর্ণিত) চারা লাগান। এক্ষেত্রেও চাষ পদ্ধিতে সর্ষের মাইক্রোপট পদ্ধতির অনুরূপ।

এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পাওয়া যায়:

১. শঠিক সময়ে বীজ বপন ও চাষ করা যায়।

২. ফসল প্রথাগত পদ্ধতির থেকে প্রায় দেড় থেকে দ্বিগুণ পাওযা যায়।

৩. উৎপাদিত দানা খুব ভারী এবং পুষ্ট হওয়ায় দাম বেশি পাওয়া যায়।

৪. ভুয়ো দানা প্রায় হয় না বললেই চলে।

৫. কালবৈশাখীর ঝড়ে ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।

৬. জমি লাঙল করতে হয় না।

৭. নিড়ানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না বা আগাছা দমনের দরকরা হয় না।

৮. বাড়তি চারা তুলে ফেলতে হয় না।

৯. গাছের গোড়ায় ভেলি বাঁধতে হয় না

১০. জমিতে সুনির্দিষ্ট গাছের সংখ্যা বজায় থাকে।

১১. প্রায় ৪০ শতাংশ বীজ কম লাগে।

১২. কমপক্ষে দুটি সেচ কম লাগে।

১৩. ফসলে সাধারণত কোনও রোগ পোকার আক্রমণ হয় না।

১৪ চাষের খরচা বেশ কিছুটা কম হয়।

১৫. প্রথাগত পদ্ধতির থেকে কৃষকের অনেক বেশি লাভ হয়।

১৬. মূল জমিতে ফসলের সময়কাল কম লাগে।

লেখক- কৃষি অধিকর্তা ও পদাধিকার বলে সচিব কৃষি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, কৃষি অধিকার

সৌজন্য: সার সমাচার


Share with Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *