
বহু বছর আগের এক বসন্তে টাটানগর থেকে ট্রেনে ফিরছিলাম খড়গপুর। পথে কোনও একটি স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল ট্রেন। স্টেশন থেকে অদূরে কয়েকটি বড় গাছের পাতা লাল রঙের নানান আভায় সমুজ্জ্বল। কী তার রূপ ভাবা যায় না। এক আদিবাসী রমণী বললেন, কুসুম পাতা বুকুল হইছে। অর্থাৎ কুসুমের নতুন পাতা ছেড়েছে।
তারপর ইতিউতি নানা জায়গায় গাছ দেখছি, কচিপাতা ছাড়তেও দেখেছি। প্রস্তুত আলোচনায় কুসুমের কচিপাতা এবং তার মাঝে মুকুল দেখানো হল। দেখানো হল কাণ্ডের গা-টিও। গাছটিকে ‘জায়না’ নামেও অভিহিত করা হয়। স্যাপিনডেসী পরিবারের এই গাছ, যে পরিবারের সদস্য লিচু, আঁশফল, রীঠা প্রভৃতি। বিজ্ঞানসম্মত নাম স্ক্লেইচেরা ওলিওসা (Schleichera oleosa).
রাজ্যের রুখাশুখা লালমাটি এলাকা যেমন পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় এর বন্যফল খাওয়া হয়। এই অঞ্চলের বনভূমিতে একটি স্বাভাবিক বৃক্ষ হলেও ইদানীং তা হারিয়ে যেতে বসেছে। বছর কুড়ি আগের এক গ্রীষ্মের বিকেলে মেদিনীপুরের আগের স্টেশন গোকুলপুরে আপন মনে সমীক্ষা করছিলাম বন্যফল/গৌণফল কী কী পাওয়া যায় সেখানে, যা খাদ্যযোগ্য। যার চারা সংগ্রহ করবো পরে এমনই বাসনা।
এক বাড়িতে পৌঁছে পেলাম কুসুমের গাছ। ফলে ভরে আছে। কতিপয় পাকাফল আমাকে খেতে দিলেন। হ্যাঁ ডিমের কুসুমের মতো রঙই বটে। পাকা ফলের খয়েরি খোসা ছাড়ালাম, ভেতরে ডিম-কুসুম রঙের শাঁস প্রকাশিত হল। তার আগে খাওয়া হয় নি এই ফল, যদিও গাছ দেখেছি, ফলও দেখেছি। এর বীজ থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদিত হয়।