শ্যামসুন্দর দোলই, ঘাটাল: আমন ধানের বীজতলা তৈরির সময় যে পরিমান বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল তা এ বছর বঙ্গে পাননি কৃষকরা। জমিতে যেটুকু জল ছিল বা জলের ব্যবস্থা করা গিয়েছিল তা দিয়েই চলছিল বীজতলা তৈরির কাজ। তার পর হঠাৎ ২ দিনের অতিবৃষ্টিতে ছবিটা একদম পাল্টে গেল। জলের তলায় চলে যায় আমন ধানের বীজতলা। একই অবস্থা অন্য সবজির বীজতলার ক্ষেত্রেও। এখন কার্যত মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের।
ঋতুচক্রে বঙ্গে বর্ষাকাল। শ্রাবণের ধারা খরতর প্রচলিত। তবুও ১১ শ্রাবণের বিকেলের শেষ পর্যন্ত হঠাৎ আকাশে কালো মেঘ জমে নিমেষেই উধাও হয়ে প্রায় অনাবৃষ্টিই জারি ছিল। তাই জলাভাবে কৃষকরা আমন ধানবীজ রোপণের সমস্যায় জেরবার হচ্ছিলেন। খানাখন্দ ও গোষ্পদ জলে কাদাচটকে কোনও রকমে ধানবীজ রোপণের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন কৃষকরা।

এ ভাবেই প্রায় এক তৃতীয়াংশ জমিতে ধানবীজ রোপণের পর হঠাৎই বুধবার সন্ধে থেকে রাতভর একটানা বৃষ্টিতে রোপিত বীজ গভীর জলে তলিয়ে গিয়েছে। কয়েক দিনের পড়ে থাকা ধানবীজের আঁটি পর দিন তুলে এনে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে রোপণ করতে হয় কৃষকদের, বাড়ে হয়রানি। কিন্তু বৃহস্পতিবারও দিনরাতের টানা বৃষ্টিতে সেই উঁচু জমিতে রাখা ধানবীজের আঁটি ভেসে গিয়েছে। শুক্রবার সকালে কার্যত সব নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। কারণ এদিন উঁচু নিচু সব ধান জমি কার্যত জলাশয়ের রূপ নিয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটাল মহকুমার ঘাটাল, দাসপুর ১ এবং ২, চন্দ্রকোনা ১ এবং ২ নম্বর ব্লকের প্রায় সব ধান জমিই জলের তলায় রয়েছে। সেই সঙ্গে জলের তলায় চলে গিয়েছে অন্য সবজির বীজতলাও। সব মিলে প্রায় ৮১ হাজার হেক্টরে সদ্য বীজ রোপণ করা জমি জলের তলায়। অসহায় কৃষকরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে বিপন্ন বোধ করছেন। জলা জমিতে ভেড়িবাঁধ তৈরি করে চাষকরা শশা ঝিঙ্গে চিচিঙ্গে ধানবীজতলাও জলে তলিয়ে গিয়েছে। ফলে নতুন করে বীজ ফেলতে হবে কৃষকদের আর তার জন্য হয়রানি এবং আর্থিক ক্ষতি আরও বাড়বে। সার্বিক ভাবে সবজি উৎপাদনের খরচ এবং বাজারে তার দামও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে এই কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নদ নদীও কুলুকুলু ধ্বনি ছেড়ে ফুলে ফেঁপে উঠে গর্জাতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই দাসপুর থানা এলাকার চণ্ডীপুর ও রাইকুণ্ডতে পারাং নদীবাঁধ ভেঙে চাষের জমিতে বন্যার জল ঢুকছে। এর জেরে নাড়াজোলের উত্তর-পশ্চিম দিকের গ্রামগুলি প্লাবিত হলে শিলাবতী নদীও ফুঁসবে এবং তার জেরে ঘাটাল ব্লকের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের গ্রামগুলিও প্লাবিত হতে পারে।