কৃষিজীবী সমাচার: ‘মোরা চাষ করি আনন্দে / মাঠে মাঠে বেলা কাটে / সকাল হতে সন্ধ্যে’।
লাভ লোকসানের আলো আঁধারিকে সরিয়ে রেখে কৃষক সারা জীবন চাষ করেই চলেন। চাষ তাঁকে করতেই হবে। না হলে নিজের পেট এবং দেশের পেট চলবে কী করে! তাই কি গ্রীষ্ম, কি বর্ষা কিম্বা খরা, সবেতেই বীজ বুনে চলেন, ফসল ফলান। ক্ষুধা মেটে দেশের মানুষের।
এমনই এক কৃষকের সঙ্গে আমরা কথা বলছিলাম তাঁর চাষের অভিজ্ঞতা নিয়ে। আমরা কথা বলছিলাম পশ্চিম মেদিনীপুরে দাসপুরের কলোড়া গ্রামের কৃষক অজয় চৌধুরীর সঙ্গে। কথা হচ্ছিল তাঁর চাষবাস, সুখ দুঃখের বারমাস্যা নিয়ে। অজয়ের প্রধান চাষ ধান। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। আমরা তাঁর সঙ্গে এবার বরবটি চাষ নিয়ে কথা বলছিলাম। জানতে চাইলাম কী ভাবে তিনি চাষ করেন। শুনছিলাম তাঁর এতদিনের চাষের অভিজ্ঞতার কথা।
প্রধানত কৃষি এবং দেশ দুনিয়ার অন্য খবরের জন্য আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিন এখানে ক্লিক করে অথবা লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ
আমাদের প্রতিদিনের সবজি তালিকায় বরবটি একটি গুরুপূর্ণ স্থান জুড়ে রয়েছে। বাঙালির পাতে নানা ভাবে হাজির হয় বরবটি, কখনও তরকারি তো কখনও ভাজা বা চচ্চড়ির রূপে। আবার বরবটির বীজও আলাদা করে সেদ্ধ করে পরিবেশ করা হয়। সেই বরবটি চাষের বিষয়ে আমরা অজয়ের সঙ্গে বলছিলাম।

অজয় প্রায় প্রতি বছর শ্রাবন মাসে ৮ কাঠা চমিতে বরবটির চাষ করেন। চলতি ‘আশ্বিনা’ জাতের বরবটির বীজই ব্যবহার করেন তিনি। মাঝারি দোঁয়াশ মাটির জমিতে ভেলি তৈরি করে বরবটির বীজ বপন করেন। ভেলি তৈরি করেন জমির উত্তর থেকে দক্ষিণ বরাবর লম্বালম্বি বীজ লাগানো হয়। জমি তৈরির জন্য সার হিসাবে প্রতি কাঠায় ৮ কেজি খইল ও ৫ কেজি করে ১০:২৬:২৬ সার ব্যবহার করেন। জমি তৈরি হলে বীজ বপন করেন। বরবটির মতো ফসলের ক্ষেত্রে আলাদা করে নাইট্রোজেন সার দেওয়ার দরকার নেই বলে জানালেন অজয়।
প্রধানত কৃষি এবং দেশ দুনিয়ার অন্য খবরের জন্য আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিন এখানে ক্লিক করে অথবা লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ
বীজ লাগানোর পর মোটামুটি ১৫ থেকে ২২ দিন অন্তর সেচ দিতে হবে। বরবটি চারা সাড়ে ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হলে মাচান বেঁধে দিতে হবে। ফলন শুরুর পর চৈত্র মাস পর্যন্ত বরবটির ফল পাওয়া যায়। চাপান সার মাসে ২ বার দিতে হয়। চাপান হিসাবে রাসায়নিক সার দেওয়া হয় কাঠা প্রতি ২ কেজি হিসাবে।
নয়া প্রযুক্তিতে সবজি চাষে বাড়ছে স্বনির্ভরতা এবং কর্মসংস্থান
জমিতে মিয়মিত নজরদারি সঙ্গে সঙ্গে যথাযত পরিচর্যাও জরুরী। সপ্তাহে ১ দিন তরল ও গুঁড়ো ওষুধ জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। এক্ষেত্রে অজয় যেটা দেন তা হল, সায়মা ও সিম। এছাড়াও তিনি মাসে একবার স্টারথিন ৫০ গ্রাম নিয়ে তা ১০ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করেন।
প্রধানত কৃষি এবং দেশ দুনিয়ার অন্য খবরের জন্য আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিন এখানে ক্লিক করে অথবা লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ
আশ্বিন মাস থেকে মোটামুটি চৈত্র মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় বরবটির। তবে ঠান্ডা বেশি পড়লে ফলও ভাল পাওয়া যায়। চাহিদা বেশি থাকলে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি হয়। না হলে ১৫ থেকে ২০ টাকার কেজির মধ্যে ঘোরাফেরা করে দাম।
না বৃষ্টির পর টানা বৃষ্টিতে ধান ও সবজির বীজতলা জলের তলায়, মাথায় হাত কৃষকদের
পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে বরবটিতে সার্বিক ভাবে লাভের পরিমান খুব খারাপ হয় না বলে জানালেন অজয়। সব খরচ খরচা বাদ দিয়ে প্রতি কাঠায় মোটামুটি সপ্তাহে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা লাভ থাকে। অজয় তাঁর জমির এই ফলস গ্রামের কলোড়ার হাটে বিক্রি করেন বলে জানিয়েছেন। ফলে এক্ষেত্রে তাঁর পরিবহন খরচ নেই।