Guava: ক্যানসার থেকে ডায়াবেটিস, কোন রোগে কী উপকারে আসে পেয়ারা জানুন

Share with Friends

পেয়ারা এমন একটি সহজ লভ্য এবং তুলনামূলক সস্তা ফল যা প্রতিদিন না হলেও প্রায়ই আমাদের খাদ্যতালিকায় থাকে। অনেক বিশেষজ্ঞ আবার পেয়ারাকে অনেক ক্ষেত্রে আপেলের থেকেও বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন বলে মনে করেন। তবে এই মতবাদ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।

এখানে প্রথমে একটা পরিসংখ্যান দিয়ে রাখা যাক, ২০১৯-এর খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্পোরেট পরিসংখ্যান তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের মোট উৎপাদিত পেয়ারার মধ্যে একা ভারতই উৎপাদন করে ২১.৮ শতাংশ। তাই এই সহজলভ্যতা একটা বড় কারণ আমাদের মতো আর্থিক অবস্থা সম্পন্ন দেশের মানুষের কাছে এই ফলটির জনপ্রিয়তার।

এবার আসুন দেখে নিন পেয়ারার মতো একটি (অ)সাধারণ ফল কী কী রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। আপাত সাধারণ এই ফলের মধ্যে কী কী খাদ্য উপাদান রয়েছে। এবং সেগুলি কোন রোগের ক্ষেত্রে আপনার শরীরে কী ভাবে উপকারে আসে।

পেয়ারার পুষ্টিগুণ

পেয়ারায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ও ফাইবার তুলনায় একটু কম পরিমাণে থাকলেও প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবন বা মিনারেল।

ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন A, বিটা-ক্যারোটিন (ভিটামিন A-র কোভিটামিন), থায়ামিন (B1), রাইবোফ্লাভিন (B2), নিয়াসিন (B3), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (B5), পাইরিডক্সিন (B6),  ফোলেট (B9), ভিটামিন C, ভিটামিন K।

যে সব খনিজ লবন বা মিনারেল প্রচুর পরিমানে রয়েছে সেগুলি হল ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক। এছাড়াও লাইকোপিন নামক একটু গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে পেয়ারায়।

উপকারিতা

বিভিন্ন রোগ বা শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে পেয়ারা নানা ভূমিকা নেয়। এর ভূমিকা ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ থেকে ডায়াবেটিস রোধে ভিষণ গুরুত্বপূর্ণ। হজম শক্তি বৃদ্ধি থেকে ত্বকের যত্নেও পেয়ারার ভূমিকা রয়েছে। এবার এক নজরে দেখে নিন কোন কোন ক্ষেত্রে কী ভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে পেয়ারা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা – আমরা জানি ভিটামিন সি আমাদের ইমিউন সিস্টেম মজবুত করতে সাহায্য করে। পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তাই যাঁদের ঠাণ্ডা লাগার ধাত রয়েছে বা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল বলে মনে হয় তাঁরা প্রতিদিন প্রমাণ সাইজের একটি পেয়ারা খেতে পারেন। এছাড়াও পেয়ারার আরও কিছু উওয়াদান ক্ষতিকর ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করতে বড় ভূমিকা নেয়।

ক্যান্সার রুখতে পেয়ারা – পেয়ারায় রয়েছে লাইকোপিন নামের ভিটামিন, এটি ভিটামিন B কমপ্লেক্স গোষ্ঠীতে পড়ে। এই লাইকোপিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি আমাদের শরীরে ক্যান্সার কোষের সংখ্যা কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পেয়ারা – ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে পেয়ারা দ্বিমুখী কাজ করে। পেয়ারার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (খাদ্যের যে পরিমান গ্লুকোজ রক্তে প্রবেশ করে তার মান) খুব কম। তাই পেয়ারা খাওয়ার পরেও রক্তে শর্করার পরিমাণ সে ভাবে বাড়ে না।

আবার ফাইবার বা তন্তু সমৃদ্ধ হওয়ার কারণেও রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফে ডায়াবেটিসে প্রভূত উপকার করে এই ফলটি।

হৃদযন্ত্র ভাল রাখতে – যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাঁদের জন্যে পেয়ারা বেশ উপকারি ভূমিকা নেয়। কারণ পেয়ারায় থাকা সোডিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও ভাল কোলেস্টেরল (good cholesterol) থাকার কারণে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে পেয়ারা।

গর্ভাবস্থায় পেয়ারার উপকারিতা – অনেকগুলি কারণের জন্যে পেয়ারাকে সুপারফুড বলা হয়। তার মধ্যে একটি হল পেয়ারায় থাকা ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন B 9। এই ভিটামিনটি গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

এর ফলে পরিমান মতো পেয়েরা খেলে গর্ভস্থ সন্তানের মস্তিষ্ক গঠন ঠিকঠাক হয়। এবং মস্তিষ্ক বিকৃতির সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তাই গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

ওজন কমাতে পেয়ারা – ফাস্টফুডের যুগে অতিরিক্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত ওজন অনেকের কাছে একটি বড় সমস্য়া। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে পেয়ারা। পেয়ারা ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ পেয়ারা বিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়।

যার ফলে অতিরিক্ত মেদ জমে না শরীরে। এছাড়া পেয়ারায় এক দিকে বেশি পরিমানে ফাইবার এবং অন্যদিকে কম শর্করা। সেই কারণে পেয়ারা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে – জাঙ্ক ফুডের আরও একটি বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল কোষ্ঠকাঠিন্য। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকতে বা মুক্তি পেতে পেয়ারার মতো প্রাকৃতিক সমাধান রয়েছে আমাদের হাতের কাছে। কারণ পেয়ারার ফাইবার।

ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় থাকা পেয়ারা মুক্তি দিতে পারে। তাই যাঁদের এমন সমস্যা রয়েছে তাঁরা প্রতিদিন একটি পেয়ারা খেয়ে দেখতে পারেন উপকার পাবেন।

হজমশক্তি বৃদ্ধি – নিয়মিত পেয়ারা খেলে হজম শক্তি এবং খিদে বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ পেয়ারার মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার। স্বাভাবিক ভাবেই যা হজম শক্তি বাড়ায়।

এত গুন থাকার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই এটি আপেলের পরিবর্ত হিসাবে ব্যবহার হয়। এবং স্বাভাবিক ভাবেই একে সুপার ফুড হিসাবে বিবেচনা করতে দু’বার ভাবতে হয় না। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত একটি পেয়ারা খাওয়ার চেষ্টা করুন।

ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় – পেয়ারা ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। পেয়ারায় থাকা লাইকোপিন, ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি-র কারণে ত্বকের নানা সমস্যা দূর হয়।

চোখ ভাল রাখতে পেয়ারা – চোখের নানা সমস্যা থেকে দূরে থাকতে বা চোখ ভাল রাখতে পেয়ারার ভূমিকা অপরিসীম। সে ক্ষেত্রে গাজরের পরেই পেয়ারা রয়েছে এই তালিকায়। ভিটামিন এ থাকার কারণে দৃষ্টিশক্তি রাড়াতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের বিকাশে পেয়ারা – পেয়ারায় থাকা ভিটামিন নিয়াসিন ও ভিটামিন বি ৬-র কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বেশ ভাল হয়। এই দুই উপাদান উদ্বেগ দুশ্চিন্তা বা অ্যাংজাইটি কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে গঠনমূলক চিন্তা ভাবনা করার শক্তি বৃদ্ধি পায়।


Share with Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *