শ্যামসুন্দর দোলই, ঘাটাল: এ বছর জুলাইয়ের শেষ দিন তিনেকের টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। পারাং, শীলাবতী-সহ কয়েকটি নদীর বাঁধ ভেঙে ঘাটাল মহকুমার ৫টি ব্লকই প্লাবিত হয়ে যায়। একই অবস্থা হয় দক্ষিণবঙ্গের আরও কিছু এলাকায়। সেই একই পরিস্থিতি তৈরি হল মাঝ সেপ্টেম্বরেও। এবারও জলের তলায় চলে গেল কয়ের শো একর জমির ফলস। মাথায় হাত কৃষকদের।
সেপ্টেম্বরের ১৩ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত দফায় দফায় বৃষ্টি চলথে থাকে। নিম্নচাপের দরুন সেই বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন। পশ্চিম মেদিনীপুরে কেশপুরের কুমারী নদী, দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের নিজ-নাড়াজোল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পারাং নদীর ভাঙা বাঁধ দিয়ে অবাধে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। যার মধ্যে রয়েছে নিজ-নাড়াজোল গ্রাম পঞ্চায়েতের লংকাগড় ও নাড়াজোল বাজার এলাকা ছাড়া সমস্ত গ্রামীণ এলাকা। এছাড়া সামাট, হোসেনপুর, রামগড়, রাজনগর পশ্চিম, রামদেবপুর ইত্যাদি রাজনগর গ্রামপঞ্চায়েতের পশ্চিম অঞ্চল এখন বেশ কয়েক ফুট জলে তলায়। বালিপোতার পর থেকে হোসেনপুর পর্যন্ত ঝাঁ চকচকে বিস্তৃত রাস্তাও বন্যার জলে ডুবে গিয়েছে।
প্রথম দফার বন্যার জল নামতে নতুন ভাবে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছিল। এ ছাড়াও নতুন করে শুরু হয় সবজি চাষও। সেসবই এখন কার্যত গভীর জলে তলিয়ে গিয়েছে। অবশ্য দাসপুর ২ নম্বর ব্লকের অপেক্ষাকৃত বেশি নীচু জমিতে ধান রোপণ সম্ভব হয়নি।

এবারে ঘাটাল ব্লকের ঝুমি, কেঠে, বুড়ী গাং ও শীলাবতী করালমূর্তী ধারণ করেনি এখনও। তবে কংসাবতী এবার গত বারের তুলনায় বেশি রণচণ্ডী মূর্তী ধারণ করছে। এর তীরে বিভিন্ন এলাকায় ফুল ফলে ভরা তরতাজা উচ্ছে, শসা, ঝিঙে, বেগুন, ঢেড়সে গাছ কোমরজলে ডুবে।

বন্যাপ্লবিত এলাকা ছাড়াও বিভাগে এলাকায় সবজির গাছের গোড়া দিনের পর দিন জলে ডুবে থেকে ঝিমিয়ে পড়েছে। গোড়া পচতে শুরু করেছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক ধারণা, এবার ধানের ক্ষতি কিছুটা কম হলেও অতি বৃষ্টির জলেই পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির সবজি, ৩০ হেক্টর জমির ফুল, ৭৫ হেক্টর জমির ফল নষ্ট হতে পারে। ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোটা পরিস্থিতির উপর সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে যা যা করার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

আকাশে বৃষ্টিযোদ্ধা এখনও রণদামামা বাজিয়ে চলেছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি বাণও বর্ষিত হচ্ছে। তাই এই দুরাবস্থায় সবজি চাষীদের কপাল পুড়ে খাক। এর মধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় বিশ্বকর্মা পুজোও ব্যাহত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পুরাণ বর্ণিত সগর বংশ উদ্ধারে ভগীরথ এই ধরায় গঙ্গাকে নিয়ে আসায় প্রবল জলপ্রবাহে যজ্ঞদ্রব্যাদি ভেসে যাওয়ায় ক্রোধে তপোবলে রাজর্ষী জহ্নু গঙ্গাকে পান করে যজ্ঞ রক্ষা করেছিলেন। এখন বছর বছর বারংবার অন্নদাতাদের কৃষি যজ্ঞ রক্ষার্থে বিজ্ঞানবলে এরকম জহ্নু মহর্ষি আসবেন কি? নাকি কৃষকগণের কান্না বারোমাস্যা হয়েই রবে যুগে যুগে!
