Durga puja 2021: যে ঐতিহাসিক রাজবাড়ির দুর্গা মূর্তির বিসর্জন হয়নি ৬০০ বছর ধরে

Share with Friends

শ্যামসুন্দর দোলই, দাসপুর:  ৬০৯তম বছরে পা রাখল পশ্চিম মেদিনীপুরে (Paschim Medinipur) নাড়াজোলের খান রাজবাড়ির (Narajole Khan Rajbari) দুর্গাপুজো (Durga puja 2021)। এখন রাজা না থাকলেও রাজবাড়ি আছে। সে কালের জাঁকজমক না থাকলেও রয়েছে সেই দুর্গা মন্দির ও দালান। রয়েছে সেই প্রথা পরম্পরা। প্রথা মেনেই আজও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতি বছর পুজো করে চলেছেন রাজপরিবারের উত্তরসুরীরা। তবে প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন হয় না এখানে। প্রতি বছরই একই প্রতিমাকে পুজো করা হয়।

নাড়াজোল রাজবাড়ির উত্তরসুরী বর্তমানে সন্দীপ খান। তিনি জানালেন, ৮২০ বঙ্গাব্দে শুরু হওয়া এই পুজোর পিছনের লৌকিক সেই কাহিনী। তিনি জানান, বংশ পরম্পরায় তাঁরা শুনে এসেছেন, বর্ধমানের সামন্ত রাজা ইছাই ঘোষের দেওয়ান উদয় নারায়ণ ঘোষ দাসপুর এলাকায় শিকার করতে আসেন। এক সময় তিনি জঙ্গলাকীর্ণ নাড়াজোলে পৌঁছন। সন্ধ্যার আগে পদ্মদিঘির পাড়ে বসে দেখেন, একটি বক আক্রমণ করছে একটি বড় বাজপাখিকে। এমন দৃশ্য কার্যত তাঁকে অবাক করে।

সে দিনের মতোই শিকার করা ছেড়ে অস্থায়ী বাসায় রাত কাটান উদয় নারায়ণ। রাতে গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলেন। এমন সময় মা দুর্গার স্বপ্ন দেন। বলেন, আমি পদ্মদিঘির পাড়ে যেখানে বাজপাখিকে বকে আক্রমণ করেছিল সেখানে রয়েছি।। আমাকে উদ্ধার করিস।

পর দিন সকালে সেখানে গিয়ে উদয় নারায়ণ একটি পিতল হাঁড়িতে রক্ষিত অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা সিংহবাহিনীর অসুর নিধন মূর্তি পান। সেটি উদ্ধার করে এনে অস্থায়ী বাসায় রাখেন। এরপর আবার মা দুর্গা স্বপ্নাদেশ দেন। বলেন, মহালয়ার পর দেবীপক্ষের সূচনায় তাঁর পূজা করার কথা। একই সঙ্গে কী নিয়মবিধি হবে তাও বলে দেন।

এই ঘটনার পর উদয় নারায়ণ প্রচুর ধনসম্পত্তির অধিকারী হন। মা দুর্গার মন্দির ও দালান নির্মাণ করেন। রাজা ইছাই ঘোষ তাঁকে খান রাজ উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই থেকে রাজা উদয় নারায়ণ খান সমকালীন রাজকীয় ভাবে দেবীপক্ষের প্রতিপদে শুরু করে দশমী তিথি পর্যন্ত মা দুর্গার  পূজা শুরু হয়। ২ জন রাজতলোয়ার হাতে প্রহরায় নব পত্রিকার ঘট পদ্মদিঘির জলে স্নান করিয়ে সপ্তমী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত হোমাগ্নি চলে। বৃহনন্দীকিশোর মতে ২৫ কেজি চালের নৈবেদ্য দেড় কেজি খইয়ের মোয়া, চাঁদসাই মিষ্টি, লুচি,গাছপালো ইত্যাদি নিবেদিত হয়। খইয়ের মোয়াই আপনা থেকে ফাটে। এটি রাজ পরিবারের সদস্যগণই ভোগ করেন।

বংশ পরম্পরায় পুজো করেন ডেবরা থানার ভাঙাবাঁধের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। এই পুজোয় পুষ্পাঞ্জলি দেন কেবলমাত্র পুরুষরাই। কোনও মহিলা পুষ্পাঞ্জলি দেন না। পুজোর শুরু থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে, তাঁরাও সেই নিময় মেনেই পুজো করেন বলে জানিয়েছেন রাজ পরিবারের সদস্য সন্দীপ খান।

সন্দীপ আরও জানিয়েছেন, এই রাজবাড়ির দুর্গার বিসর্জন হয় না। প্রথামাফিক ঘটের নিরঞ্জন হয় মাত্র। একই মূর্তি বংশপরম্পরায় পূজিত হয়ে আসছে। রাজবাড়িবাসীদের বিশ্বাস এটি এতই জাগ্রত মা যে এর আগে ৩ বার মূর্তি চুরি গিয়েছে। কিন্তু মূর্তি শেষ পর্যন্ত চোর ডাকাতরা নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। চুরির রাত্রের পরের দিন সকালেই আশপাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে এই দুর্গা মূর্তি।


Share with Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *