Alcohol price down: চালাও ফোয়ারা… পলাশ মুখোপাধ্যায়ের কলম

Share with Friends

পলাশ মুখোপাধ্যায়।

সকাল সকাল বেজায় উল্লাস আমাদের পাড়ার চায়ের ঠেকে। এমনিতে ঠেকে উল্লাস, আমোদ, উত্তেজনা লেগেই থাকে কিন্তু আজ যেন একটু বেশিই মনে হচ্ছে। গুটি গুটি পায়ে সেই দিকে এগোতেই মালুম হল ব্যাপারটা।

রাজ্য সরকারের একটা সিদ্ধান্তে এমন খুশির হিল্লোল। গত এক বছরে নাকি মদের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। তাতে বেশ একটু সমস্যাতেই পড়ে গিয়েছিলেন রাজ্যের সুরাপায়ীরা। একই সমস্যার শরিক ছিলেন আমাদের ঠেকের অনেকেই। সম্প্রতি সুরাপায়ীদের ব্যথা অনুভব করেছে আমাদের রাজ্য সরকার। তাই আবগারি শুল্ক (Alcohol price down) কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে তারা। এতে মদের দাম মোটামুটি ২৫% থেকে ৩০% পর্যন্ত কমে যাবে।

এই খবর জানতে পেরেই ঠেকে এমন খুশির হাওয়া। কেউ কেউ একটু বক্রচাহনীতে জিজ্ঞাসা করতেই পারেন, মদের দাম কমেছে তো চায়ের দোকানে উল্লাস কেন? আরে বাবা, সকালের ‘চাতাল’ তো সন্ধেয় মাতাল হতেই পারেন, তাই না?

চায়ের দোকানের মালিক বিশুদাকে অবশ্য এই খুশিতে সামিল মনে হল না। একবার বেজার মুখে বলেও ফেললেন মদের দাম না কমিয়ে তেলের দামটা আরও একটু কমালে ভাল হত। কিন্তু এমন একটা ভাল খবরের উচ্ছ্বাসে বিশুদার চাওয়াটা বুদবুদের মতই মিলিয়ে গেল।

কিন্তু এই চাওয়াটা কি বিশুদার একার? আমাদের রাজ্যে মা মাটি মানুষের সরকার অবশ্য মদ্যপায়ীদের জন্য সব সময়েই উদার। সরকারে আসার কদিন পরেই চোলাই খেয়ে মৃতদের দুই লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েই তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরে ক্রমশ বেড়েছে মদের দোকান, বেড়েছে সুরাপানের বহর।

মানছি এ থেকে রাজ্য সরকারের আয় প্রচুর। তাই মদের দোকানের লাইসেন্স পেতে এখন আর আমাদের রাজ্যে খুব একটা অসুবিধে হয় না। দীঘাকে গোয়া বানাতে না পারলেও, মদের দোকানের সংখ্যায় আমরা হয় তো গোয়ার কাছাকাছি চলেই যাব কিছুদিনের মধ্যে।

আমরা খুব গালি দিই, হ্যাটা করি কিন্তু পাশের রাজ্য বিহার যা করেছে তা আমরা করতে পারিনি। বিহার কিন্তু তাদের রাজ্যে মদ্যপান নিষিদ্ধ করেছে অনেকদিন আগেই। সেখানকার মানুষ লুকিয়ে চুরিয়ে মদ খান নিশ্চয় তবে প্রকাশ্যে নয়।

আমাদের ক্ষেত্রে উল্টো। লকডাউনে অন্য পরিষেবা যখন বন্ধ ছিল তখন ক’দিনের মধ্যেই খুলে দেওয়া হয়েছিল মদের দোকান। লকডাউন, করোনা, শারীরিক দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে সেই দোকানের সামনে সুরারসিকদের ভিড়ের ছবিটা নিশ্চয় মনে আছে আপনাদের। না, রাজ্য সরকার সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে কোনও চেষ্টাই করেনি। বরং তারা উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে প্রকারান্তরে।

এবার আসি বিশুদার চাওয়াতে। জ্বালানি এবং ভোজ্য তেলের দাম নিয়ে নতুন করে কিছু বলবার নেই। কেন্দ্র প্রায় চল্লিশ টাকা দাম বাড়িয়ে লোক দেখাতে পাঁচ এবং দশ টাকা পেট্রোল ডিজেলে কমিয়েছে। সেই দেখে কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যও আরও কিছু কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে।

আমাদের রাজ্য এ ব্যাপারে অনড়। এমনিতেই পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডে আমাদের থেকে পাঁচ টাকা কম মূল্যে পেট্রোল মেলে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবী তিনি আগেই এক টাকা কমিয়েছিলেন। তখনও কিন্তু আমাদের সঙ্গেই অন্যান্য বেশ কয়েকটি রাজ্য তেলের দাম কমিয়েছিল। এখন তারা কমালেও আমাদের রাজ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা তেলের দাম কমাবে না।

রাজ্য সরকারের আশা মদের দাম কমালে মদ বিক্রি আরও বাড়বে, সেই সঙ্গে বাড়বে রাজ্যের আয়ও। কিন্তু মানুষকে নেশাতুর করে আয় বাড়ানোর এই পন্থা কি আদৌ সুখকর?

মদের শুল্ক কমালে তেলের শুল্ক কেন কমানো হবে না, এই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সঙ্গত হলেও তাদের বক্তব্যকে আমি ধরছি না, কারণ তারা শুধু বিরোধিতার জন্যই এটা বলেন, মন থেকে নয়।

কিন্তু চায়ের দোকান মালিক বিশুদা বা ছাপোষা আমার মত নাগরিকেরা যথেষ্ট আরাম পেতাম যদি জ্বালানি তেলের শুল্ক আমাদের রাজ্য আরও একটু কমাতো। না, এতে গাড়ি চালাতে সুবিধা হত তা শুধু নয়। সুবিধা হত বাজার যেতে।

এই শীতে যে সবজির দাম যা থাকার কথা তার চাইতে ৩ গুন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ডিজেলের আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে সুবিধা হত বাসে, অটোয় চাপতে। দিনের পর দিন যাত্রী ভাড়া ইচ্ছেমত বেড়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার নিরব।

আরও পড়ুন: South Indian film industry: ওরা পারে, আমরা না: পলাশ মুখোপাধ্যায়ের কলম

সরকারি মতে ভাড়া বাড়েনি কিন্তু এক এক বাসের রুটে এক এক রকম ভাড়া। অটো নিজেদের মর্জি মত ভাড়া চায়। সব দেখেও নিরব রাজ্য। তারা শুধু সমব্যথী সুরাপায়ীদের জন্য। তাই তো সকলেই যখন তেলের দাম কমার আশায় তাকিয়ে তখন মদের দাম কমিয়ে চমক দেন তারা।

বাবুমশায়… সাধারণ মানুষের কাছে মদ্যপান ছাড়াও আরও অনেক কিছু খাওয়ার থাকে, অনেক কিছু করার থাকে, সেটা যদি বুঝত কেউ…


Share with Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *