WB Municipality Election 2022: ভোটের আমি, ভোটের তুমি…, কলম ধরলেন পলাশ মুখোপাধ্যায়

Share with Friends

পলাশ মুখোপাধ্যায়।

সকাল সকাল ভোট (WB Municipality Election 2022) দিয়ে আঙুলে কালি লাগিয়ে হাজির আমাদের বাড়ির পরিচারিকা। জিজ্ঞাসা করলাম “কি গো ভোট দিলে?” খুশি খুশি জবাব “হ্যা দিলাম দাদা।“ একটু বাজিয়ে দেখতে জিজ্ঞাসা করলাম তোমাদের ওখানে প্রার্থী কারা। একজনের নামই সে বলতে পারল, শাসক দলের প্রার্থী। বাকি অন্যদের নাম বলতে গিয়ে দেখলাম সে আমার নামটাই বলছে। বিপদ বুঝে সরে এলাম। বুঝে গেলাম কাকে ভোট সে দিয়েছে।

আমাদের আর এক পরিচিত তো সরাসরি বলেই দিল, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পাচ্ছি, আমি ভোটটা টিএমছিকেই দেব।” আপনি আমি যতই সরকারি টাকা নয়ছয় হচ্ছে বলে অভিযোগ করি না কেন, এই সব ভাণ্ডার বা বিভিন্ন প্রকল্পের নামে আর্থিক সাহায্যের সুফল কিন্তু শাসক দল দিব্যি পাচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ এই ভোট কেনার প্রকল্প চালুর পিছনে প্রশান্ত কিশোর বা তার সংস্থা আইপ্যাকের হাত আছে।

এবার গোল বেঁধেছে আইপ্যাককে নিয়ে। তৃণমূলের একটা বড় অংশই এখন এই সংস্থা বা তার কর্তাকে নিয়ে বেজায় অসন্তুষ্ট। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে খানিক গুতো খেয়ে মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলায় আইপ্যাকের আগমন, এ গল্প কম বেশি সকলেরই জানা। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের চোখ ধাঁধানো ফল বাংলায় প্রশান্ত কিশোরের মাটি শক্ত করে। কিন্তু এর পরে দলীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আইপ্যাকের হস্তক্ষেপ অনেকের কাছেই বাড়াবাড়ি মনে হতে থাকে। দলের নানা স্তরের নেতারা সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে দল ফের নিজেদের মত করে চালানোর পথে হাঁটতে হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে।

আইপ্যাকের কর্মীরা রাজনৈতিক দলের কেউ নন। মূলত একটি কর্পোরেট সংস্থার মতই তাদের কাজকর্ম, নিয়োগ। তাঁরা কাজও করেছেন সেই ভাবেই। আমি নিজে জানি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, বোঝার চেষ্টা করেছেন সেখানকার মানুষের মন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা বা কর্মীদের ভাবমুর্তি, তাঁদের সম্পর্কে স্থানীয় মানুষ কী ভাবেন। তাঁরা কেমন মানুষকে প্রার্থী হিসেবে চান এসব কিছুই ভাল মত জেনে তাঁরা প্রার্থী তালিকা তৈরিতে জোর দিয়েছেন। ফলস্বরূপ অধিকাংশ জায়গাতেই পরিচিত তৃণমূল নেতারা প্রার্থীপদ পাননি। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সব নেতা হয় বিতর্কিত, নয় তো কুখ্যাত। আইপ্যাক মানুষের মন বুঝেই ওই প্রার্থীদের বাদ দিয়েছিল। কিন্তু গোল বেঁধেছে এখানেই।

দল চলে বা দল চালায় এই সব বিতর্কিত, কুখ্যাত মানুষেরাই। শান্ত, নম্র, ভদ্র লোকেদের পক্ষে রাজনৈতিক দল চালানো সম্ভব নয়। ফলে দিকে দিকে ওঠা বিক্ষোভ ঠেকাতে শেষমেশ আসরে নামতে হয় তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে। আবার প্রকাশিত হয় পুরভোটের প্রার্থী তালিকা। দেখা যায় আগের বারে বাদ যাওয়া “দলের সম্পদের” অধিকাংশই নতুন তালিকায় পুরপ্রার্থী হিসেবে ঠাঁই পেয়ে গিয়েছেন। এখানেই এ রাজ্যে আইপ্যাকের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশান্ত কিশোর থাকবেন না যাবেন সেটা তো কিছুদিন পরেই বোঝা যাবে। কিন্তু একটা বিষয় দিনের আলোর মতই স্পষ্ট, বিতর্কিত নেতারা দলের সম্পদ, তাঁরা আছেন এবং থাকছেন স্বমহিমায়।

এখন সকলেই দল করতে এসেছেন গুছিয়ে নেওয়ার আশায়। তাই প্রার্থীপদ না পেয়ে গোঁসা হওয়া স্বাভাবিক, এতে দোষের কিছু তো দেখি না। কিন্তু দলের প্রতীক তো একজনই পাবেন। ব্যস… যে যেমন প্রতীক পেলেন নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। তৃণমূল নেতৃত্ব কিন্তু এই সব বিক্ষুব্ধ কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন। বেশ কয়েক জনকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তা স্বত্বেও বহু গোঁজ প্রার্থী রয়ে গিয়েছেন আনাচে কানাচে।

যাঁদের পাঁচ বা সাত বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁদের যদি কেউ পুরভোটে জিতে আসেন সে ক্ষেত্রে কি দল তাদের ফিরিয়ে নেবে? যদি টাই হয় তবে কি বিক্ষুব্ধ দলীয় প্রার্থী যিনি নির্দল হয়ে জিতেছেন, দল যাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তাকে কি দলে না নিয়ে বিপক্ষ দলকে বোর্ড গড়তে দেওয়া হবে? এসবের উত্তর আপনার আমার জানা। অতীত থেকে আমরা প্রচুর এমন ঘটনার লজ্জাজনক উদাহরণ পেয়েছি। তা হলে এই বহিষ্কারের নাটক কেন? সাধারণ মানুষ আসলে বিনোদন ভালবাসেন তাই তাদের জন্য এগুলি হল রাজনৈতিক বিনোদন। নিরস, নির্লজ্জ, নীতিহীন, ভোট সর্বস্ব রাজনীতির মাঝে এই হাস্যকর বিনোদনই আপনার আমার একমাত্র পাওনা।


Share with Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *