Municipality Election 2022: বেসামাল কর্মীরা, জেতা ম্যাচেও গা জোয়ারির চোনা, পলাশ মুখোপাধ্যায়ের কলম

Share with Friends

পলাশ মুখোপাধ্যায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। দরকার নেই রাজনীতি খুব ভাল করে বোঝারও। তা স্বত্বেও কিন্তু বাংলার প্রায় সর্বস্তরের মানুষ জানতেন পুর নির্বাচনে (Municipality Election 2022) ফল কি হতে পারে। বিশেষ করে বিধানসভা নির্বাচনোত্তর রাজ্যের বিরোধী শক্তিগুলির হাল দেখে পুর নির্বাচনে শাসকদল ওয়াকওভার পেয়ে গিয়েছে বলাই যায়। নির্বিষ বাম, গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে মাজা ভাঙা বিজেপির পক্ষে পুরনির্বাচনে দারুণ কিছু করে দেখানোর আশা সেই দলের সমর্থকেরাও এই মুহূর্তে করেন বলে মনে হয় না। কংগ্রেসের কথা তো ছেড়েই দিন। তাই শাসক দল তৃণমূলের কাছে পুরভোটে বিপুল ভাবে ফিরে আসা সময়ের অপেক্ষাই ছিল। উচ্চ নেতৃত্ব সে কথা জানতেনও। কিন্তু হায়, দল চালানো এক জিনিস, দল সামলানো আর এক জিনিস। বর্তমান তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথমটিই করে চলেছেন প্রথা মেনে। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ সামলানোর ক্ষমতা তাদের এখনও হয়েছে বলে মনে হয় না।

কলকাতা পুরনির্বাচনেই এর আঁচ মিলেছিল। শীর্ষনেতৃত্ব অতিরিক্ত উৎসাহী হতে বারণ করেছিলেন। প্রকাশ্যেই অবাধ নির্বাচন করবার জন্য দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও কর্মীদের থামানো যায়নি। যাবে কি করে? বহু বছরের অভ্যেস, রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছে এই সংস্কৃতি। বাম আমলে দেখে আসা শিক্ষা এতো সহজে ভোলার নয়। তাছাড়া নিচু তলার বহু বাম কর্মীই এখন শাসক দলে, তাদের পুরনো অভ্যেস এবং তৃণমূলের অত্যুতসাহী কর্মী, সঙ্গে বছর দশেকের গরিমা। মিলেমিশে ফল একটাই, সামলাতে না পারা একটা দল।

কিছু মাস আগে আগরতলা পুরনির্বাচনে বিজেপি তাদের খেলা দেখিয়েছে। তার প্রভূত নিন্দা এবং প্রতিবাদ করেছিল সেখানে বিরোধিতায় থাকা তৃণমূল। বিজেপির বিরুদ্ধে অস্বচ্ছ ভাবে, বলপূর্বক নির্বাচনে জেতার অভিযোগ করে পুনর্নিবাচনের দাবিও করেছিল তারা। তৃণমূল নেতা কর্মীরা সেখান থেকে ইতিবাচক শিক্ষা নিয়ে কলকাতায় অবাধ, শান্তিপূর্ণ, দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন করে দেখাতেই পারতেন। কিন্তু তারা শিক্ষাটা কাজে লাগালেন অন্যভাবে।

আমার কর্মজীবনের প্রথম দিকে দেখেছি বামেদের একছত্র আধিপত্য। জেলায় জেলায় কাজ করতে গিয়ে দেখেছি গাছের পাতাও বাম নেতাদের নির্দেশ ছাড়া মাটিতে পড়বার ছাড়পত্র পেতো না। স্থানীয় এই সব নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের প্রার্থীদের বাড়িতে পৌঁছে যেত সাদা থান। অর্থাৎ বামেদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে বাড়ির মেয়েদের ওই সাদা থান পরতে হবে পরিণামে। কাজও হত। নিঃশব্দে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নিতেন বিরোধীরা। সেই রীতি এখনও চলে আসছে। গতকাল যারা এই কাজ করেছেন আজ তারাই ভয় দেখানোর অভিযোগ জানাচ্ছেন। যারা আগে ভয়ে প্রার্থীপদ তুলে নিয়েছেন, সেই শিক্ষাটা তাদের রয়ে গিয়েছে। তারা এখন বিরোধীদের বাড়িতে সাদা থান পৌঁছে দেন। কেউ কেউ তো অতি উৎসাহী হয়ে এখন বিরোধী প্রার্থীকে অপহরণ করেও ভয় দেখাচ্ছেন।

আদতে পাল্টায়নি কিছুই। এমনিতেই করোনার অজুহাতে তৃণমূল বিনা নির্বাচনে কম বেশি বছর দুয়েক অতিরিক্ত ক্ষমতা ভোগ করেছে অধিকাংশ পুরসভায়। বোর্ড শেষ হয়ে যাওয়ার পর, পুরপ্রশাসকের ছদ্মবেশে শাসন করেছেন তৃণমূল নেতারাই। কারণ বছর দুয়েক আগে যখন পুরভোটের সময় এসে গিয়েছিল তখন রাজ্যে বিজেপির অবস্থা বেশ ভাল। লোকসভা নির্বাচনে তাদের অভাবনীয় ফল। প্রচুর তৃণমূল নেতা কর্মী ক্ষমতালাভের নতুন আশায় দলে দলে যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে। তৃণমূলের একটু যেন বেসামাল অবস্থা। তাই সেই সময় তৃণমূল নির্বাচন করতে চায়নি।

করোনা এসে যাওয়ায় এ ব্যাপারে অ্যাডভান্টেজও পেয়ে গিয়েছিলে তারা। তার পরে তো পরিস্থিতি অনেকটাই নিজেদের দিকে নিয়ে এসেছে তৃণমূল। বিজেপির সেই বাড়বাড়ন্ত এখন অনেকটাই স্তিমিত। তাই এখন ভোট হলে কোনও অসুবিধে নেই। প্রায় ফাঁকা মাঠেই গোল দেওয়া যাবে। সেটাই হত, ছন্নছাড়া বিরোধীদের সেভাবে কোনও প্রভাবই পড়ত না এই নির্বাচনে। কিন্তু ওই যে… অতি উৎসাহ, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, কর্মীদের সামলাতে না পারার ব্যর্থতা। সব মিলিয়ে নিরামিষ এক নির্বাচনকে, অকারণ ঝাল, মশলাদার করে তুলল তৃণমূলই।

এখন যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁদের নিরানব্বই শতাংশ মানুষই কিছু না কিছু স্বার্থের জন্য এই কাজে এসেছেন। তাই যখন তখন দল বদলেও যেমন তাদের অস্বস্তি বা লজ্জা নেই, তেমনই ক্ষমতার অনৈতিক ব্যবহারও তাদের প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য। সে কথা বিলক্ষণ জানা আছে তৃণমূল নেত্রীর। তিনি বার বার সাবধানও করেন। কিন্তু সে কথায় যে কাজ হয় না তার প্রমাণ এই অনায়াসে জেতা নির্বাচনেও গা জোয়ারির চোনা ফেলা। এখনও শেষ হয়নি, পুরনির্বাচনের একটা বড় অংশ সামনেই। সেখানেও কী ফল হতে পারে তা মোটামুটি অনুমেয়। কিন্তু শাসক দল কি এত সাদামাটা ভাবে সেই নির্বাচন করতে দেবেন? কারণ একটু মশলাদার না হলে তো আবার স্বাদই পান না তাদের বেসামাল কর্মীরা।


Share with Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *