নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শাসক (Paschim Medinipur DM) খুরশিদ আলী কাদরীর হাত ধরে ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখছে জঙ্গলমহলের (Jangalmahal) শিশুরা। শালবনী ব্লকের পীরচক গ্রামে এক দল শিশুর জন্য শিক্ষার দরজা খুলে গেল জেলা শাসকের উদ্যোগে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাতির ভয় এড়িয়ে স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন খুরশিদ আলী কাদরী।
কোনও জাতির এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা যে সর্বপ্রথম এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত তা যেন প্রশাসক হিসাবে সঠিক ভাবেই জানেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শাসক। গত ৩১ জানুয়ারি তিনি শাল জঙ্গলে ঘেরা শালবনীর কয়েকটি গ্রামে পৌঁছে যান। সেখানকার নানান সমস্যা সম্পর্কে সম্যক ধারনা নেওয়ার চেষ্টা করেন।
পীরচক গ্রামে মূলত লোধা সম্প্রদায়ের বসবাস। এই গ্রামেরই অনতিদূরে বুরিশোলে হাজির হয়ে যান জেলা শাসক। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা শাসকরা এবং অন্যান্য আধিকারিক। লোধা গ্রামের পাড়ার ভিতর মাটিতে ত্রিপল পেতে অন্যদের সঙ্গে বসে পড়েন জেলা শাসক। কথা বলেন গ্রামের সমস্যা সম্পর্কে। কথা প্রসঙ্গেইই জিজ্ঞেস করেন গ্রামের শিশুরা নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে তো! কিন্তু জানা যায় পীরচকের বেশ কয়েকটি শিশু নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে না।
তৎক্ষণাৎ জেলা শাসক জানতে চান কেন শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে না! জানতে পারেন, লোধা পরিবারের ওই বাচ্চারা প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। স্থানীয় কুতুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কুতুরিয়া জুনিয়র হাইস্কুলের খাতায় তাদের নাম রয়েছে। কিন্তু নাম থাকাটাই সব নয়, নিয়মিত স্কুলে কেন যাচ্ছে না শিশুরা তা জিজ্ঞসা করতেই উঠে আসে আসল কারণ। বাচ্চাদের বাবা মায়েরা পেটের দায়ে সকাল সকাল কাজে বেরিয়ে যান। আর বাচ্চাদের স্কুলে যেতে হয় জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। কিন্তু হাতির ভয়ে নিয়মিত আর স্কুলে যাওয়া হয় না শিশুদের।
এই সমস্যার সমাধানে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে করতেই স্থির হয় শিশুদের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এবং তার জন্য অন্তত একটি অটো যেন নিয়মিত এই শিশুদের বাড়ি থেকে স্কুল, স্কুল থেকে বাড়ি যাতায়াতের কাজ করে তা নিশ্চিত করেন জেলা শাসক। শুধু তাই নয়, শিশুদের জন্য নতুন স্কুল ব্যাগ জামা কাপড়ের ব্যবস্থাও করার কথা বলা হয়।
জেলা শাসক খুরশিদ আলী কাদরি ৩১ জানুয়ারি পীরচক গ্রাম ঘুরে আসার এক সপ্তাহের মধ্যেই অটো-সহ সব ব্যবস্থা করে ফেলা হয়। নিয়মিত চলতে শুরু করেছে একটি অটো। সেই সঙ্গে শিশুরা পেয়েছে নতুন স্কুল ব্যাগ, জামাকাপড়ও। শাল পিয়াল ঘেরা লোধাদের এই গ্রামের শুধু শিশুরাই নয় খুশি তাদের বাবা মায়েরাও। সময়ের আগেই যেন বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। শিশুগুলির চোখেও যেন জীবন গড়ে তোলার স্বপ্ন ঠিকরে বেরচ্ছে।