সমাজের গালে সপাটে চড় বসালো OMG 2 – OMG 2 রিভিউ

Share with Friends

ওহ মাই গড 2 (OMG2) রিলিজ হয়ে গেছে। 10 বছর আগে ওহ মাই গড রিলিজ করেছিল। আর সেই মুভি আমার এত টাই ভাল লেগেছিল যে omg 2 র ট্রেলার দেখে সেটা দেখার ইচ্ছে প্রবল হয়। আর মুভি দেখে মনে হলো যেন কারেন্টের শক খেলাম।

এইরকম একটা কনটেন্টের ওপর মুভি বানানোর জন্যে ডিরেক্টর, স্টোরি রাইটার অমিত রাই কে বাহবা না দিয়ে থাকা যায়না। বিশেষ করে আজকের দুনিয়ায় যেখানে একটু এদিক ওদিক হলেই বয়কট করা, ভাঙচুর করা, জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

সেখানে এমন একটা মুভি বানানো যেখানে একসাথে ধর্ম, সেক্স এডুকেশন, লিগ্যাল সিস্টেম, সমাজিক ভন্ডামি, টিনএজ অ্যাঙ্জাইটি, যৌন শোষণ বা সেক্সুয়াল একসপ্লয়টেশন সবকিছু দেখানো হয়েছে। আজকের দিনে প্রায় 150 কোটি বাজেটের এমন মুভি বানানোর জন্যে যথেষ্ট সাহসের দরকার হয় বস।

বিশেষ করে এমন একটা গল্পের সিনেমা যেটা আমাদের সমাজে আমাদেরই ভন্ডামি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। সেই সিনেমা প্রথম দিনেই বয়কট করে দেওয়া হতে পারে। ইদানিং বলিউডে ভাল কনটেন্টের মুভি খুব কমই তৈরি হয়। কিন্তু প্রায় 10 বছর আগেই তৈরি হয়েছিল ভিকি ডোনার।

একজন স্পার্ম ডোনারের গল্প নিয়ে পরিচালক সুজিত সরকার এর ডেবিউ ফিল্ম। যে ফিল্মে ডেবিউ করেছিলেন আয়ুষ্মান খুরানা আর ইয়ামি গৌতম। একটা ছকভাঙা গল্পে আপামর ভারতবাসী একেবারে কুপোকাত হয়ে গেছিলো। সেই বছরই রিলিজ করেছিল অক্ষয় কুমার আর পরেশ রাওয়াল অভিনীত ওহ মাই গড।

মুভিটি একটি গুজরাতি নাটক কাঞ্জি বিরুদ্ধ কাঞ্জি, যেটা কিনা আবার একটি হলিউড মুভি the man who sued God থেকে অনুপ্রাণিত ছিল। মুভিতে পরেশ রাওয়াল অভিনয় করেছিলেন একজন গুজরাতি নাস্তিক ব্যবসায়ী কাঞ্জিলাল মেহতার চরিত্রে। যে পারলে ভগবানকে বেচে খেয়ে ফেলে।

একদিন এক ভূমিকম্প হয়। আর সেই ভূমিকম্পে গোটা শহরে কেবলমাত্র তার দোকান টাই পুরো ভেঙে গুড়িয়ে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। সবার মনে হয় যেহেতু সে নাস্তিক ছিল আর ভগবানকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করতো তাই ঈশ্বর রেগে গিয়ে শুধু তার দোকান টাই ভেঙে দিয়েছেন। এরপর এন্ট্রি হয় কৃষ্ণ রূপে অক্ষয় কুমারের। যার পরামর্শে কাঞ্জি ভগবানের বিরুদ্ধে আদালতে কেস ঠুকে দেয়।

এই satirical বা ব্যঙ্গাত্মক মুভিতে সমাজের ভন্ড সাধু, মৌলবী দের মুখোশ খুলে দেয় আর দেখানো হয় কিভাবে তারা সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নিজেদের ভগবানের আসনে বসিয়ে রাখে। এখন 10 বছর আগে এই ধরনের গল্প সমাজে বিশাল ইমপ্যাক্ট ফেলেছিল বলাই বাহুল্য।

কিন্তু এখনকার দিনে এই ধরনের গল্প মানুষের ওপর কোন প্রভাব কি আদৌ ফেলতে পারে। এটাই ছিল মনের মধ্যে প্রশ্ন। কিন্তু omg 2 এর গল্প একেবারেই আলাদা আর নতুন ধরনের টপিকের ওপর ভিত্তি করে লেখা। এর গল্প এতটাই একটা সেন্সিটিভ ইস্যুর ওপর লেখা যে সেন্সর বোর্ড প্রায় 27 টা দৃশ্য কেটে যায় মধ্যে ফ্রন্টাল নুডি টি বা কন্ডোম এর অ্যাড আছে, এবং এটিকে প্রাপ্তবয়স্ক বা A রেটিং দেওয়ার পরেই থিয়েটারে রিলিজ করানোর অনুমতি দেয়।

যদিও মুভিটা হয়তো টিনএজারদের কথা ভেবেই বিশেষ ভাবে বানানো হয়েছে। কিন্তু তাদেরই দেখা বারণ।
একটা কথা পরিষ্কার বলে দেওয়া উচিত যে omg 2 কিন্তু অক্ষয় কুমারের মুভি নয়। শিব ভক্ত অক্ষয় কুমার তাঁর কুল পুরনো অবতারে আমাদের কাছে ফিরে আসেন। কিন্তু উপস্থিতি নিঃসন্দেহে সিনেমায় প্রাণ ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু মুভির হিরো হলো এর গল্প আর পঙ্কজ ত্রিপাঠী র মেথড অ্যাক্টিং আর কমিক টাইমিং।

এবার চলে আসি মুভির স্টোরিতে। মুভিতে পঙ্কজ ত্রিপাঠী র চরিত্রের নাম হলো কান্তি শরণ মুদগাল। যে নিজে একজন শিব ভক্ত আর তার ব্যবসাও চলে শিব ভক্তির মাধ্যমে। এখানে দেখানো হয় তার এক ছেলে আর এক মেয়ে। মজার ব্যাপার হল তার ছেলে পড়ে শহরের সবথেকে নামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। যাইহোক তার সুখের সংসারে ভূমিকম্প হয় যখন তার ছেলেকে স্কুলে ক্রমাগত ব্যঙ্গ করা হয়। তার মধ্যে একটা inferiority complex আনা হয়।

আর সঠিক কাউন্সেলিং বা শিক্ষার এর অভাবে সে ভুল মেডিকেশন নেয় আর স্কুলের বাথরুমে মাস্টারবেশন করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। স্কুলের কিছু দুষ্টু ছেলে এটার ভিডিও করে ভাইরাল করে দেয়। যার ফলস্বরূপ ছেলেকে স্কুল থেকে রস্টিকেট করা হয় আর কান্তির পুরো পরিবারকে সামাজিক বয়কটের মধ্যে পড়তে হয়। এর মধ্যে ছেলে আবার দুবার সুইসাইড করার চেষ্টাও করে।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই একজন মিডল ক্লাস বাবা হয়ে কান্তি বুঝতে পারেনা সে কি করবে? এইখানে এন্ট্রি হয় অক্ষয় কুমারের। প্রথমে যাঁকে ভগবান শিব বানানো হয়েছিল। পরে সেন্সর বোর্ডের কাঁচি চালানোর পরে শিব দূত বানিয়ে দেওয়া হয়। যদিও তাতে বিশেষ কোন পরিবর্তন নজরে আসে না।

অক্ষয় কুমার omg পার্ট 1 এ ভগবান কৃষ্ণ সেজে যেমন কাঞ্জিলাল মেহতা কে সঠিক পরামর্শ দিয়েছিল এখানেও সে কান্তি শরণ মুদ্গাল কেও বোঝায় যে তার ছেলে আদপে কোনো ভুল কোন কাজ করেনি। সমাজের কাছে তার ক্ষমা চাওয়ার কোনোই দরকার নেই। উল্টে সমাজের উচিত তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার।

বিশেষ করে তার ছেলে বিবেকের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। স্কুলের ক্ষমা চাওয়া উচিত তাকে রাস্টিকেট করার জন্যে, তাকে সঠিক জ্ঞান বা শিক্ষা না দেওয়ার জন্যে সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে। কান্তি শরণ মুদ্গল্ এবার কেস ঠুকে দেয় সেইসব জাল ডক্টর, কেমিস্ট যারা বিবেককে ভুল মেডিকেশন দেয় আর বিবেকের স্কুলের বিরুদ্ধে।
কোর্টের মধ্যে এই কেস অনেক বড় একটা ইস্যু সেক্স এডুকেশন হয়ে দাঁড়ায়। কোথাও কোথাও সোশ্যাল মেসেজ দিতে গিয়ে মুভি একটু সিরিয়াস হয়ে যায়।

তবে এই মুভিতে আমাদের সোসাইটির হিপোক্রেসি খুব ভালোভাবে দেখানো হয়েছে। মুভিতে কান্তি মুগদল তার ছেলেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হিন্দু ধর্মেরই সাহায্য নেয়। মুভিতে বড় বড় অভিনেতা থাকলেও কোথাও কিন্তু মনে হবে না গল্পকে কেউ ছাপিয়ে গেছে। খুবই সুন্দর ডায়লগ ডেলিভারি সেই সঙ্গে কমিক টাইম সব মিলিয়ে ফাটাফাটি। কোথাও কোথাও হাসির খোরাক ও পাবেন। আবার কোন কোন ডায়লগে মনে হবে এটা সোসাইটির গালে একটা খুব জোরে চড় বসানো হলো।

OMG 2 সোসাইটিকে বারবার আয়না দেখায়, আমাদের শেখায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে, সেক্স এডুকেশন নিয়ে সমাজের মধ্যে কথা বলার, ও বিশেষ করে টিনেজারদের জাগ্রত করার। OMG 2 তে গল্প মুখ্য ভূমিকায় থাকলেও পঙ্কজ ত্রিপাঠী কে আমাদের সমাজ বলা চলে আবার ইয়ামি গৌতমকে সমাজের সাধারণ মানুষ বলা চলে। অর্থাৎ পঙ্কজ ত্রিপাঠী যে ভূমিকা গ্রহণ করেছে তা আমাদের সমাজের ভূমিকা হওয়া উচিত আবার ইয়ামি গৌতম যে ভূমিকা পালন করেছে তা আমরা অর্থাৎ সমাজের মানুষ।

আমার মতে সমাজের প্রতিটি মানুষের এই সিনেমা দেখা উচিৎ। যেহেতু ভালো সিনেমা তাই ফল্প হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আর এই রকম সিনেমা ফল্প হলে বলিউড ফিরে যাবে আবার সেই সাউথের কপি করার দিকেই। তাই ভালো সিনেমা সাপোর্ট করুন দেখুন।

OMG 2 Review

Share with Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *