Children Home: সপরিবারে হোমের শিশুদের সঙ্গে ছেলের জন্মদিনের আনন্দ ভাগ করে নিলেন শিক্ষিকা

Share with Friends

নিজস্ব সংবাদদাতা, দাসপুর: ছেলের পাঁচ বছরের জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে অন্য রকম কিছু করতে চেয়েছিলেন। সেই ভাবনা থেকেই চিল্ড্রেন হোমের (Children Home) শিশুদের সঙ্গে বিশেষ দিনটির আনন্দ ভাগ করে নিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরে দাসপুরের কলোড়ার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষিকা সৌম্যশ্রী মন্ডল এবং তাঁর সোনাখালীতে বাবার পরিবার। আজ বুধবার দাসপুর ২ নম্বর ব্লকের খেপুতে অবস্থিত চিল্ড্রেন হোমের শিশুদের সঙ্গে সারা দিন কাটালেন তাঁরা।

প্রতি বাবা মায়ের স্বপ্ন থাকে সন্তানের জন্মদিনটিকে বিশেষ ভাবে স্মরণীয় করে রাখতে। আর আমাদের বাঙালিদের মধ্যে সন্তানের ৫ বছরের জন্মদিন সব সময়ই বিশেষ একটি মাইল ফলক। সেই দিনে বিশেষ কিছু করার কথা দীর্ঘদিন ধরেই ভাবছিলেন ঘাটালের শ্যামসুন্দরপুর রাজকুমার হাইস্কুলের শিক্ষিকা সৌম্যশ্রী মণ্ডল, তাঁর স্বামী অরূপকান্তি বেরা এবং তাঁদের পরিবার। কিছু দিন আগেই তাঁরা খোঁজ পান বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গোপীগঞ্জের কাছে খেপুতের উত্তরবাড় এলাকায় বেনাই বিজয় কৃষ্ণ রুরাল ডেভলপমেন্ট সোশ্যাইটি পরিচালিত চিল্ড্রেন হোম ফর সিএনসিপি বয়েজের।

বেরা ও মন্ডল পরিবারের তরফে হোমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁদের কাছে সন্তান আত্রেয় বেরার ৫ বছরের জন্মদিনটি হোমের শিশুদের সঙ্গে কাটানোর এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৫ মে আত্রেয়র জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষ্যে ১৮ মে তাঁরা হোমের শিশুদের সঙ্গে কাটানোর কথা বলেন। আন্তরিকতার সঙ্গে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন হোমের চাইল্ড ডেভলপমেন্ট অফিসার বিমল দাস এবং হাউস ফাদার সিদ্ধেশ্বর পন্ডিত।

হোমের আধিকারিকদের সঙ্গে আত্রেয়র পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

এদিন আত্রেয়কে নিয়ে তার বাবা, মা, দাদু কমল কৃষ্ণ বেরা, ঠাকুমা পারুল বেরা এবং দিদা দীপশিখা মণ্ডল হোমে পৌঁছে যান। সেখানে তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা করেন হোমের কর্মী, অফিসার এবং শিশুরা। সারা দিন সেখানে কাটায় আত্রেয়র পরিবার। শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন, ছবি তোলেন, বিশেষ দিনের আনন্দ ভাগ করেন নেন। শিশুদের হাতে তুলে দেন ছোট কিছু উপহারও। হোমের তরফে আত্রেয়র হাতেও তুলে দেওয়া হয় জন্মদিনের উপহার।

হোমের শিশুদের হাতে উপহার তুলে দিচ্ছে আত্রেয়। নিজস্ব চিত্র।

হোমের ব্যবস্থাপনা ঘুরে দেখেন হোমের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন আত্রেয়র পরিবার। এই হোমে বিভিন্ন বয়সের মোট ৪৭ জন শিশু রয়েছে। তার মধ্যে বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুর সংখ্যা ৩০। কথা প্রসঙ্গে হোমের আধিকারিকরা জানান, এই সব শিশুদের কী ভাবে উদ্ধার করা হয়, কী ভাবে রাখা হয়, বিভিন্ন শিশুর বিভিন্ন রকম সমস্যা রয়েছে, কী ভাবে সেই সব শিশুদের দেখভাল করা হয়।

সিদ্ধেশ্বর পন্ডিত জানান, এমনও উদাহরণ রয়েছে, যেখানে এই হোম থেকে বেরিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অনেকে। কিন্তু তাঁরা হোমে কাটানোর দিনগুলি ভুলে যাননি। তাই তাঁরা দেখা করতে এসেছেন। অনেকে আবার বিয়ে করে পরিবারের সঙ্গেও ঘুরে যান। অনেকে শিশুকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের পরিবারও হোমে ফোন করেন যোগাযোগ রাখেন।

বিমল দাস জানান, এখানে বিশেষ ভাবে সক্ষম এবং সাধারণ শিশু সবার জন্যই পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। যাদের স্কুলে যাওয়ার বয়স তারা নিয়মিত স্কুলে যায়। যাঁদের শারীরিক কোনও সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা, যাদের মানসিক সমস্যা রয়েছে তার জন্য চিকিৎসা ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের টিম নিয়মিত শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করে। ফের এখানে আসার জন্য আত্রেয়দের আমন্ত্রণ জানান, হোমের সুপারিনটেনডেন্ট অনুপকুমার বেরা।

সারা দিন কাটানোর পর সৌম্যশ্রী জানিয়েছেন, তাঁরা খুব খুশি ছেলের জন্মদিনটিকে এমন বিশেষ ভাবে কাটাতে পারার জন্য। অনেক দিনের ইচ্ছে পূরণ হল। তবে শুধু এই জন্মদিনই নয় পরেও তাঁরা আসবেন। আর এখানে এসে বুঝতে পারছেন, এমন সুন্দর এবং বিশেষ একটি জায়গায় আসার জন্য বিশেষ কোনও দিনের প্রয়োজন নেই, যে কোনও দিনেই আসা যায়। যেদিন আসতে পারবেন সেই দিনটাই জীবনে বিশেষ দিন হয়ে থেকে যাবে। তাই তাঁরা ফের আসবেন শিশুদের এই ফুলের বাগানে।


Share with Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *