অবৈধ দখলদারির সমস্যায় জেরবার শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম, প্রশাসনের দ্বারস্থ কর্তৃপক্ষ

Share with Friends

শ্যামসুন্দর দোলই, ঘাটাল: জমি জবর দখলের জেরে জেরবার অবস্থা শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমের। পশ্চিম মেদিনীপুরে দাসপুর থানা এলাকার আরিট শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমে এই সমস্যার জন্য প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের সাহায্য চেয়েছে আশ্রম কর্তৃপক্ষ।

আরিটের ভবানীচরণ কাপাসের উদ্যোগে ১৯৪১ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ সংঘ গড়ে ওঠে। ১৯৬৪ সালে সেটি ‘আরিট শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম’-এ পরিণত হয়। এবং স্বামী অমলানন্দ মহারাজ, সমাজসেবী নিকুঞ্জ বিহারী চৌধুরী, কমল নন্দী, ভবানী চরণ কাপাস,  দাশরথি কর্মকার, অম্বিকা চরণ কাপাস, সতীশ চন্দ্র কুইল্যা এই ৭ সদস্যের ট্রাস্টির মাধ্যমে জনকল্যাণ মূলক কাজ শুরু হয়।

২০১৬ সালে একমাত্র জীবিত ট্রাস্টি কমল নন্দীও বার্ধক্যজনিত সমস্যার ভুগছিলেন। তাঁর অনুমোদনে ২০১৬ সালে ২২ নভেম্বর নতুন ট্রাস্টি করা হয় ডক্টর শচীনন্দন সাউ, শুভেন্দু শেখর কাপাস, গণেশ পাল, অজিত কুইল্যা, সমরেন্দু কাপাস,  সিদ্ধার্থ কোলে, তপন কুমার ঘোষ, অমলেন্দু কাপাস, স্বর্ণেন্দু মাইতি ও  চিকিৎসক মধুসূদন পালকে। 

নতুন ট্রাস্টিদের উদ্দেশ্য ভূমি সংক্রান্ত এক দলীলে, ওই মৌজার ৭৮০ দাগের ৬ শতক জমি এবং আরও কিছু জলা, কালা, ডাঙা পতিত, ডোবা-সহ মোট ২.৬২৫ একর ভূসম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়। এরই একাংশে ১৯৬৫ সালে আরিট বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর পরেও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ভবানী চরণ কাপাসের নামে কিছু জমি সংগ্রহ হয়।

পরে এই বিদ্যালয় রাজ্যসরকার অধিগ্রহণ করলেও জমির সত্ত্ব আশ্রমের নামে রয়েছে। আশ্রমের ট্রাস্টিদের উদ্দেশ্যে এক উইলে বলা হয়, ‘তাঁরা এবং ভবিষ্যতে তাঁদের স্থলাভিষিক্ত শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমের পক্ষে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে এই সম্পত্তি প্রয়োগ ও ব্যবহার করতে পারবেন।  তাতে ভবানীচরণ কাপাসের বা তাঁর ওয়ারিশদের কোনও নেই এবং থাকবে না। যদি আপত্তি করা হয় তা সব জায়গায় এবং সব আদালতে নামঞ্জুর হয়ে যাবে’।

অথচ বর্তমানে এই ভূসম্পত্তির ৪৪৬, ৪৫০, ৪৫১, ৬০১-সহ কয়েকটি দাগে অবৈধ ভাবে দখল করে চলছে বসবাস বলে অভিযোগ। এই দখলদারদের মধ্যে প্রয়াত পঞ্চানন দাসের পুত্র রতিকান্ত দাস, লক্ষ্মীকান্ত দাস, শ্রীকান্ত দাস, প্রশান্ত দাস, প্রয়াত গৌর পণ্ডিতের পু্ত্র জয়দেব পণ্ডিত (ওরফে রাজপণ্ডিত), শুভঙ্কর পণ্ডিত (ওরফে রাজপণ্ডিত) ও দীপঙ্কর পণ্ডিত (ওরফে রাজপণ্ডিত) এবং প্রয়াত গোবিন্দ মণ্ডলের পু্ত্র অরূপ মণ্ডল ও দুলাল মণ্ডলদের আশ্রম কর্তৃপক্ষ থেকে সনাক্ত করা হয়েছে। এই দখলদারীর পিছনে সারদাচরণ কাপাস (পিতা পঞ্চানন) ও সিদ্ধেশ্বর কাপাস (পিতা ভবানীচরণ)-এর  কোনও ইন্ধন রয়েছে কিনা তাও আশ্রম কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে। এমনকি কিছু জাল দলির তৈরি করে এই দখলাদরি চলছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

এই দখলদারির জন্য সব থেকে বড় সমস্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের লাগোয়া রাস্তাটি সরানো যাচ্ছে না। ফলে যানবাহনের কোলাহল এবং পড়ুয়াদের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা এড়ানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরেণকুমার দে। এই অবস্থায় আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী অক্ষয়ানন্দ মহারাজ-সহ কর্তৃপক্ষ দখলদারিদের জায়গা খালি করে দেওয়ার অনুরোধ করছেন। যাতে স্কুলে পিছন দিয়ে নতুন রাস্তা বানানোয় যায়। এবং এই কাজে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের আইনী সাহায্য ও এলাকার মানুষের সার্বিক সহযোগিতা চাইছেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি তাহলে পঠনপাঠনের মান এবং স্কুলে পরিবেশ আরও ভাল করা সম্ভব। সেই সঙ্গে উপযুক্ত খেলার মাঠ ও পড়ুয়াদের জন্য হোস্টেলও গড়ে তোলা যাবে। এখন দেখার সেই অনুরোধ এবং প্রশাসসনের কাছে আইনী সাহায্য প্রার্থণা কতখানি কাজে দেয়।


Share with Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *