Summer Vegetable Cultivation: বৈশাখের গ্রীষ্মে সবজি চাষে কী করবেন, পরামর্শ দিলেন ডক্টর কল্যাণ চক্রবর্তী

Share with Friends

গ্রীষ্মে কী কী সবজি চাষ করতে পারেন এবং তা কী ভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে করবেন, কতটা জমিতে কী দূরত্বে বীজ লাগাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত লিখলেন ডক্টর কল্যাণ চক্রবর্তী।

কচু

বৈশাখ মাস কচু লাগানোর সময়। ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠমাস পর্যন্ত কচু রোয়া যাবে। কালী, ধলী ভাল জাত। প্রতি বিঘায় বীজ-কচু লাগবে ৭০ থেকে ১৪০ কেজি। ৬০x৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে কচু লাগাতে হবে। বিঘা প্রতি ১৫, ২৫ এবং ৭ কেজি করে যথাক্রমে ইউরিয়া, সিঙ্গল সুপার ফসফেট এবং মিউরিয়েট অব পটাশ প্রাথমিক সার দিন। যাঁরা চৈত্রমাসে কচু লাগিয়েছেন তাঁরা বৈশাখ মাসে (রোয়ার এক মাস পর) ১৫ কেজি ইউরিয়া চাপান সার হিসাবে দিন।

সেচ ব্যবস্থা থাকলে মুখী কচুর বীজ রোপণ করা যাবে ফাল্গুন মাসে যা শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে তোলা যাবে। বীজের ওজন ১৫-২০ গ্রাম, ৬০x৪০-৪৫ সেমি দূরত্বে ৫-৬ সেমি গভীর করে লাগাতে হবে। প্রতি বিঘায় বীজ লাগবে ১০০ কেজি।

ওল

বৈশাখ মাস ওল লাগানোরও সময়, চৈত্রমাসে লাগানো শুরু করা যায়। সাঁতরাগাছি, কাভুর প্রভৃতি ভাল জাত। বিঘায় ১২০ কেজি বীজ-ওল লাগবে। ৭৫x৭৫ সেন্টিমিটার দূরে ওলের কন্দ লাগাতে হবে। প্রাথমিক সার হিসাবে বিঘায় যথাক্রমে ১৫, ৫০ এবং ২২ কেজি হারে ইউরিয়া, সিঙ্গল সুপার ফসফেট এবং মিউরিয়েট অব পটাশ লাগবে। যাঁরা চৈত্রমাসে ওল লাগিয়েছেন তাঁরা বৈশাখ মাসে (এক মাস বাদে) বিঘা প্রতি ১২ কেজি চাপান সার দিন।

ভিণ্ডি

বর্ষাকালীন ভিণ্ডি চাষের জন্য বৈশাখ মাস থেকে ভিণ্ডির বীজ বোনা শুরু হবে। আষাঢ় মাস পর্যন্ত তা বোনা যায়। বীজের হার হেক্টর (সাড়ে সাত বিঘা) প্রতি ১০ কেজি; চারার দূরত্ব ৬০x৪৫ সেমি অথবা ৬০x৩০ অথবা ৪৫x৩০ সেমি। ০.২% ব্যভিস্টিন দ্রবণে ভিজিয়ে বীজ শোধন করলে ঢলে পড়া রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতি হেক্টরে ৫০ থেকে ৭০ হাজার চারা থাকে। বীজ বোনার আগে হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ২২ কেজি ফিউরাডান ৩ জি কীটনাশক দানা ছড়ালে নানান কীটশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।

লাউ-কুমড়ো

বর্ষার লাউ পেতে হলে বৈশাখ মাসে বীজ বুনুন, তা জ্যৈষ্ঠমাসেও বোনা যাবে। দূরত্ব রাখুন ১ মিটার ৮০ সেন্টিমিটার x ১ মিটার ২০ সেন্টিমিটার। লাউের উন্নত জাত হল পুসা সামার প্রলিফিক লং, পুসা সামার প্রলিফিক রাউন্ড, পুসা মঞ্জরি, পুসা মবীন, অর্ক বাহার ও নানান হাইব্রিড বা সংকর জাত।

পাহাড়ী এলাকায় যাঁরা চৈত্রমাসে লাউ ও কুমড়ো বুনেছেন তাঁরা বৈশাখ মাসে (বোনার এক মাসের মাথায়) প্রথমবার এবং জ্যৈষ্ঠমাসে (বোনার ২ মাস পর) দ্বিতীয় বার চাপান সার হিসাবে নাইট্রোজেন দিন। চাপান সার হিসাবে প্রতিবার হেক্টর প্রতি (সাড়ে সাত বিঘা) সাড়ে বারো থেকে পনেরো কেজি করে নাইট্রোজেন দিতে হবে। নাইট্রোজেনকে ইউরিয়াতে হিসাব করতে হলে ২.২ দিয়ে গুণ করুন।

পুঁই চাষ

বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠমাস বর্ষার পুঁইের বীজ ফেলার আদর্শ সময়। পুকুরের পাঁক তুলে শুকিয়ে জমিতে দিলে পু্ঁইয়ের বৃদ্ধি ভাল হয়। তাই অনেক চাষীকে দেখা যায় ফাল্গুন -চৈত্র-বৈশাখ মাসে শুকিয়ে যাওয়া পঙ্কিল পুকুরে মাদা করে পুঁইয়ের বীজ বুনতে। বর্ষার জল পুকুরে জমার আগেই একপ্রস্ত ফসল নেওয়া হয়ে যায়।

অনেকে জলভরা পুকুরের পাড়ে বা নয়ানজুলির ধারে পুঁই লাগিয়ে তার মাচা পুকুর বা জলাশয়ের উপর তুলে দেন, তাতে আলাদা করে জমিও দরকার হয় না, পুকুরের জল ঠাণ্ডা থাকে, মাছেদের আরাম হয়, বেশি দিন জল ধরে রাখা যায়। যাইহোক, পুঁইয়ের মাটি বেশ কয়েকবার চাষ দিয়ে গুঁড়ো ও ঝুরঝুরো করে নিতে হবে। সেই জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে বিঘা প্রতি ১০ গাড়ির মত খামার পচা সার, কেঁচো-সার বা ভার্মি-কম্পোস্ট অথবা গোবর সার। শেষ চাষে মেশাতে হবে বিঘা প্রতি কুড়ি কেজির মত ইউরিয়া, চার কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট এবং আট কেজি মিউরিয়েট অব পটাশ।

এক বিঘা জমিতে ২ কেজি পুঁই বীজ লাগবে। বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধনের জন্য প্রতি কেজি বীজে ৪ গ্রাম থাইরাম অথবা ম্যাঙ্কজেব বা ক্যাপটান অথবা ৩ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম মেশানো দরকার। জৈব পদ্ধতিতে প্রতি কেজি বীজে পাঁচ গ্রাম হারে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি এবং সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স নামক জীবাণু মিশিয়ে শোধন করা যায়। এদের দ্রবণে বীজ ভিজিয়ে ছায়ায় শুকিয়েও বীজ বপন করা যায়। এতে প্রাথমিক অবস্থায় পুঁইয়ে গোড়া পচা এবং পাতার বাদামি-দাগ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

পু্ঁই লাগানো হয় সারিতে, ভেলিতে বা মাদায়। বীজ বোনা ছাড়াও অনেকে তৈরি চারা মূল জমিতে বসান। পনেরো থেকে ত্রিশ সেন্টিমিটার লম্বা চারা ৯০x৬০ সেন্টিমিটার দূরত্বে বসাতে হবে।

বীজ বোনার তিন ও ছয় সপ্তাহ বাদে বিঘা প্রতি দশ কেজি হারে ইউরিয়া চাপান সার দিলে পুঁইয়ে ডগমগে যৌবন লক্ষ্য করা যায়।

বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসের ঝড়বৃষ্টিতে কিছুটা সেচের প্রয়োজন মেটে। তবে জমিতে আর্দ্রতার ঘাটতি হলে পাঁচ-ছয় দিন অন্তর হালকা সেচ দিতে হবে। মাঠের নিকাশী বন্দোবস্ত ঠিক হওয়া দরকার।

জমিতে প্রাথমিক অবস্থায় নিড়ানি দেবার সময় ঘন গাছ তুলে পাতলা করতে হয়। এই গাছ বাজারে ভাল দরে বিকোয়। প্রতি বিঘায় যিনি ত্রিশ কুইন্টাল পুঁই তুলতে পারেন, তিনিই ভাল চাষি।


Share with Friends

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *