তাঁকে রাজনীতিবিদ হিসাবেই সবাই চেনেন। কিন্তু দক্ষ সেই রাজনীতিবিদের মধ্যেও রয়েছে এক জন কবিও। তিনি রাজ্যের শাসক দলের (All India Trinamool Congress)ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের (Daspur) দাসপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি, তিনি আশিস হুদাইত (Ashis Hudait)। যিনি সময় পেলেই রাজনৈতিক বক্তৃতা লেখার নোটপ্যাড সরিয়ে কবিতার খাতা টেনে নেন। তাঁর কলম থেকে বেরিয়ে আসা তিনটি কবিতা প্রকাশ করল কৃষিজীবী সমাচার।

কি কথা বলে গেল মহামায়া পার্বতী
(দশমীতে দেবীর দিক নির্দেশ)
বিদায়ের করুন সুর-
আকাশ বাতাস জুড়ে বাংলায়;
বিবেকের কাছে কি দাবী
রেখে গেল মহামায়া পার্বতী?
তুষ্ট কি হয়েছেন দেবী?
আড়ম্বর, উপাচার,
দেখনদারী খয়রাতি দেখে।
বছর শেষে মূল্যায়ন পত্রে
দেখতে হবে নাতো-
কর্তব্যের মান- খারাপ, খুব খারাপ,
কিংবা ভীষন লজ্জাজনক।
মাতৃ আরাধনা যেন
আবর্জনায় মোড়া কার্পেট না হয়;
কৈলাসে ফেরবার আগে-
সে কথাটাই বলে গেল নাতো?
পরের বার এসে তাকে
দেখতে হবে না তো-
উপচে পড়া ভীড়
চির নির্বাসনের সেলুলার বৃদ্ধাশ্রমে?
অত্যাচারে অবহেলায়-
কেঁদে কেঁদে অন্ধ হবে নাতো
ঘরণী সহধর্মিনী?
পুরুষের ইচ্ছার আলো- আঁধারীতে
লীন হয়ে যাবে নাতো-
নাবালিকার বড় হয়ে ওঠা?
সারাটি বছর ধরে অনুশীলন করো,
যে কথা নিয়েছো শপথ
দেবীর পদতলে বসে,
নইলে অনন্তকাল
ঘটা করে উৎসবই হবে,
নারীর নামের আগে-
রবে সেই চেনা অলংকার
অবলা,অসহায়া।
*********************
আমার দুর্গা
আমার দুর্গা গর্ভধারিনী-
রক্তমাংস গড়া,
মা ডাকের মন্ত্রে তুষ্ট-
স্নেহ মমতায় ভরা।
আমার দুর্গা সহোদরা-
আমায় নিয়েই তার বড়াই,
আমার দীর্ঘ আয়ুর দাবীতে-
তার যমের সাথে লড়াই।
আমার দুর্গা আমার ঘরনী-
যেন স্বয়ং অন্নপূর্ণা,
রেঁধে বেড়ে আমায় না খাইয়ে-
তৃপ্ত সে কভু হয় না।
আমার দুর্গা আমার কন্যা-
সে বড় অভিমানী,
আমার হৃদয়ে বসতি তার-
সে বড় আদরিনী।
আমার দুর্গা অভুক্ত থেকে-
খাওয়ায় তার সন্তানে,
অন্ন জোগাতে দেহ বেচে দেয়-
ধার ধারে না অসম্মানের।
আমার দুর্গা হাসপাতালে
নার্স কিংবা আয়া-
বিছানায় পাশে সারারাত
জেগে করে রোগীর সেবা।
আমার দুর্গা মাতঙ্গিনী-
রাণী লক্ষ্মীবাঈ ,
আমার দুর্গা গ্রামের প্রধান-
দিনরাত কাছে পাই।
আমার দুর্গা আশাকর্মী-
ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার,
যারা করোনা যুদ্ধে দিয়েছে এনে-
জয় জয় কার।
আমার দুর্গা গড়েছে দেশ-
মাটি কেটে পথ গড়ে,
দেশটাকে সবুজে ভরেছে-
বৃক্ষ রোপন করে।
আমার দুর্গা দল গড়ে-
হয়েছে স্বনির্ভর,
দাঁড়িয়েছে সে পুরুষের পাশে-
বড়ই বিস্ময়কর।
****************************
অমূল্য বর্ণপরিচয়
বিদ্যাসাগর, তোমার বর্ণপরিচয়ের
প্রথম ভাগটা পড়ে পথ হাঁটলেই-
দেশটা বিশ্বের সেরা দেশ হোতো।
তোমার জীবনী মন দিয়ে পড়লেই-
ব্যাঙের ছাতার মতো
রাস্তার দুধারে গজিয়ে উঠতো না
অগ্রগতির সেরা পরিহাস বৃদ্ধাশ্রম।
বর্ণবৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা
চিতা বাঘের মতো শিকারী-
দেশটাকে নধর হরিণ
ভেবে করতো না শিকার।
পেশি শক্তির কাছে আজ মাথা নুইয়েছে বিদ্বজনেরা,
নইলে তোমার মূর্তি ভেঙ্গে
দুর্বৃত্তরা দম্ভ নিয়ে বেড়াতো না
প্রকাশ্যে লোকালয়ে রাজপথে।
বিদ্যাসাগর আবার টোল খোলো,
অবাধ্যকে বেত্রাঘাত করো,
আগুনের আঁচে লোহাকে না পোড়ালে-
লোহা হয় না অনুগত।
দেশটা বিদ্বান্ হোল,
উপচে পড়া ভীড় বিদ্যালয়,
মহাবিদ্যালয়ে-
তবুও ভেঙে গেল সংস্কৃতির হাড়গোড়; ভাঙতো না-
যদি মন দিয়ে পড়তো তারা
তোমার বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগ।